বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

উত্তর সম্পাদকীয় | রাষ্ট্রহিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ, সংহত হতে হবে, এটাই সময়ের দাবী

Riya Patra | ১৯ মে ২০২৫ ১৫ : ৪২Riya Patra


শোভেন ব্যানার্জি


জিজ্ঞেস করল, 'কি নাম তোর?' নাম শুনে, মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল 'কলমা পড়।' পারেনি। ওরা বলল, 'তোর ধর্ম কি ?' 'হিন্দু ।' উঠল হাতিয়ার, একবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে। পুরো শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছিল। ওরা নির্মম মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করছিল হিংস্র পাশবিকতায়। শুধু ওকে কেন? আমাকেও মেরে ফেলো। বলল. 'যা মোদিকে গিয়ে বল।' গত ২২ এপ্রিল বৈসরণ উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদীদের হতে ২৭ জন মানুষের প্রাণ যায়। 


আপাতদৃষ্টিতে ঘটনা এটুকই, কিন্তু সত্যিই কী তাই?  এতো হিমশৈলের চূড়া মাত্র, মূল পরিকল্পনার লক্ষ্যে গোটা দেশময় চরম অস্থিরতা, অশান্তির পরিবেশ গড়ে তোলা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে উন্নয়নের পথ থেকে সরিয়ে, প্রতিদ্বন্দ্বীকে হীনবল করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি।  দুষ্ট মানুষ আর দুষ্ট রাষ্ট্রচরিত্র একই রকম ।


ঘটনার সময়টা দেখুন, কাশ্মীরের ভরা পর্যটনের মরশুম। দেশি বিদেশি লক্ষ-লক্ষ পর্যটক। কাশ্মীরের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে। সাধারণ শিকারা চালক, 'কাওয়া' চা বিক্রেতা থেকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই গোটাবছরের রুজি রোজগারে ব্যস্ত। ঠিক এই সময়ে, এমন আঘাত যাতে পর্যটকরা আর কাশ্মীরে না আসেন। রোজগার বন্ধ হয়ে যায় সাধারণ কাশ্মীরের যুবকদের। তারা আবার সেই অন্ধকার দিনগুলোতে ফিরে যাক যখন দিনে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের বিরূদ্ধে পাথর ছোড়া, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। 


একটু তলিয়ে দেখবেন, যাদের মারল,  তারা পর্যটক। নাম জিজ্ঞেস করে, ধর্ম জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে। কেন? কারন সন্ত্রাসীরা চাইছিল সারা ভারতবর্ষ জুড়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষে লিপ্ত হোক। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে পুরো দেশ জ্বলে পুড়ে ছারখার হোক। গণতান্ত্রিক ভারতের ঐক্যের মুলে আঘাত করার এক নিপুন পরিকল্পনা। অন্য্ ধর্মের মানুষদের গণহত্যা অবশ্য এই প্রথম নয়। নিরাপরাধ অসহায় সাধারণ জনগণকে লক্ষ্য করে এই হত্যাকাণ্ড প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে  নিরাপত্তা বাহিনীর হতে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রর চরিত্র দেখলেই বোঝা যায়। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য বস্তুর পরিবর্তন হয়েছে। আগে পুলিশ নিরাপত্তা বাহিনীকে মূলত লক্ষ করা হত, এখন কিন্ত সাধারণ জনগন এদের লক্ষ্য বস্তু। আরডিএক্স-সহ গণবিধংসী অস্ত্রের অধিক ব্যবহার ও উদ্ধারের সাক্ষী। এরা চায় সাধারণ ভারতবাসীদের মধ্যে ধর্মের নামে, জাতের নামে, প্রাদেশিকতার নামে, ভাষার নামে নিত্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি  করে সংঘাত বাধিয়ে, উন্নয়নের পথ থেকে ভারতকে সরিয়ে, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে।


যদি আর একটু খেয়াল করেন দেখবেন প্রাথমিক ভাবে যখন হিন্দুদের উত্তেজিত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর অপচেষ্টা ব্যর্থ হল, ষড়যন্ত্রর অভিমুখ ঘুরে গেল অন্য দিকে। অপারেশন সিঁদুরের অবব্যহিত পরেই সন্ত্রাসীদের ন'টা আঁতুর ঘরে নিশ্চিন্হ করে দেওয়ার পরই পূর্ব-পশ্চিম সব প্রান্ত থেকে অবিরাম প্রচার শুরু হল ভারত বোমা মেরে পাকিস্তানের সব মসজিদ ভেঙে ফেলছে। চেষ্টা হল ভারতীয় মুসলিমদের উত্তেজিত করার। সুদুর কানাডা থেকে ভারতীয় শিখ সমাজকে উস্কানি দেওয়াও আমরা দেখলাম। তারা নাকি সব পাকিস্তানকে সমর্থন করবে।


ভারতের সচেতন নাগরিক এই বর্বর, জঙ্গি সন্ত্রাসীদের প্ররোচনায় পা দেননি। জঙ্গিদের মূল দুরভিসন্ধির মূলে আঘাত করেছেন। নাগরিকরা প্রাজ্ঞ মানসিকতা, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা দিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের ধর্মের রাজনীতির অন্তসারশূন্যতাকে উপেক্ষা করেছে।
রাষ্ট্র তার সবরকম শক্তি দিয়ে বাইরের অপশক্তির মোকাবিলা করছে। যদিও রাষ্ট্রের ভিতরের কিছু শক্তি ঘুণপোকার মতো চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের ভিতর থেকে দুর্বল করে দিয়ে বাইরের শক্তির পরিকল্পনার ইন্ধনে ঘৃতহুতি দিতে। এখানেই সচেতন নাগরিকদের প্রয়োজন । সজাগ থাকার, সতর্ক থাকার। সবরকম পরিস্থিতিতে সংঘবদ্ধ হয়ে থাকার। জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, রাজ্য, ধনী, দরিদ্র, রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা ভারতীয়। সংযম আসুক আমাদের আচরণে। ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করুন বিভেদের অপ চেষ্টা। এই দেশটা আমাদের মাতৃভুমি। নাগরিক ঐক্যই রাষ্ট্রের শক্তি। নিজেদের মধ্যের সমস্ত বিরোধ, মতভেদ সরিয়ে রেখে রাষ্ট্রহিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ সংহত হতে হবে, এটাই সময়ের দাবী।


                                                                                                         (কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অধিকর্তা, মতামত নিজস্ব)


Operation sindoorIndia Pakistan tentionIndiaPakistan

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া